আরবী ১২ মাসের অষ্টম মাস শাবান। শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি কুরআনের ভাষায়- ليلة مباركة (লাইলাতুম মুবারাকা) বা বরকতময় রজনী! আর হাদীসের ভাষায়-ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান) বা শা’বানের মধ্য রজনী।
শব-ই বারাআত কি?
“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءت যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শব-ই বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শব-ই বারাআত ( شب براءت)
● শব-ই বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত।
● কেউ কেউ “শব-ই বারাআত” নামে হাদীসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত খোড়া যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমি বলিঃ “আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের কোথাও কি নামায শব্দ আছে?”
● অনুরূপ ভাবে তাওহীদ কে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের কোথাও তাওহীদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ কুরআন ও হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক শব্দ কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। আমরা যাকে তাওহীদ বলি কুরআন ও হাদীসের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হল এ তাওহীদ।
● তেমনি আমরা যাকে “শব-ই বারাআত” বলি তথা শা’বানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি, এই অর্থবোধক শব্দ হাদীসে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শব-ই বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদীসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান!” সুতরাং তাই হল শব-ই বারাআত।
পবিত্র আল-কুরআনে শব-ই বারাআতঃ
পবিত্র কুরআনে কারীম ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাবের ভাষ্য সলোঃ
● সূরা দুখানের ১-৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
حم-والكتاب المبين- إنا أنزلناه فى ليلة مباركة- إنا كنا منذرين- فيها يفرق كل أمر حكيم-
——-“হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।”
এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরীন গণের মতামতঃ
০১. তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ
ان انزلناه فى ليلة مباركة هى ليلة القدر او ليلة النصف من شعبان نزل فيها من ام الكتاب من السماء السابعة الى السماء الدنيا انا كنا منذرين-
——-“নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত)। অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী!”
০২. তাফসীরে তাবারী শরীফ পৃষ্ঠা-২২, খন্ড ১০ -এ বর্ণিত আছেঃ
عن محمد بن سوفة, عن عكرمة فى قول الله تبارك وتعالى (فيها يفرق كل أمر حكيم) قال: فى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم أحد, ولا ينقص منهم أحد.
كذا أخرج ابن جرير وابن منذر وابن أبى حاتم وكذا فى روح المعانى-
“আল্লাহ তা’আলার বাণী فيها يفرق كل أمر حكيم এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না।
অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনুল মুনজির ও ইবনু আবি হাতেম (রাঃ)। এরূপ রুহুল মায়ানীতেও আছে।”
০৩. তাফসীরে কুরতুবী পৃষ্ঠা-১২৬, খন্ড ১৬ এ বর্ণিত আছেঃ
ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة, وليلة البراءة, وليلة الصك, وليلة النصف من شعبان-
■ ইমাম কুরতুবী(রা:) বলেনঃ এ রাতের ৪ টি নাম আছে। যথাঃ
ক. লাইলাতুম মুবারাকা।
খ. লাইলাতুল বারাআত।
গ. লাইলাতুছ্ ছাক এবং
ঘ. লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান
০৪. তাফসীরে বাগভী পৃষ্ঠা-২২৮, খন্ড ৭ -এ বর্ণিত আছেঃ
عن ابن عباس رضى الله عنهما أن الله يقضى الأقضية فى ليلة النصف من شعبان, ويسلمها إلى أربابها فى ليلة القدر-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন শবে বরাতের রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ঠ দায়িত্ববান ফেরেস্তাদের কাছে ন্যস্ত করেন শবে ক্বদরের রাতে।
এ রকম ৬৫ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মুবারাকা বলতে শব-ই ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শা’বান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহের নামঃ
(১).তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-২১৪।
(২).তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-১১০।
(৩).তাফসীরে বাহরুল মুহীত, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৪।
(৪).তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৭০।
(৫).তাফসীরে যাদুল মাছির, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২২।
(৬).তাফসীরে নাসাফী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০২।
(৭). তাফসীরে নিসাপুরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০।
(৮). তাফসীরে কাশ্শাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২।
(৯).তাফসীরে নুকুত ওয়াল উয়ূন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০।
(১০).তাফসীরে দুররে মানসূর, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৬৯।
(১১).তাফসীরে খাজেন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৪৩।
(১২).তাফসীরে আল বোরহান, খণ্ড-২৩, পৃষ্ঠা-১১৬।
(১৩).তাফসীরে রাযী, খণ্ড-১৭, পৃষ্ঠা-১৩৩।
(১৪).তাফসীরে আলুসী, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-৪২৪।
(১৫).তাফসীরে হাক্কী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬।
(১৬).তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃষ্ঠা-১২৭।
(১৭).তাফসীরে সাভী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০২।
(১৮).তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৪৬।
(১৯).তাফসীরে জামিউল বায়ান, খণ্ড-২০, পৃষ্ঠা-১৫১।
(২০).তাফসীরে নুসূকী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২০।
(২১).তাফসীরে কাদের, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬।
(২২).তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮।
(২৩).তাফসীরে কাসেমী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮।
(২৪).তাফসীরে কোশাইরী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯০,।
(২৫).তাফসীরে আবু সাউদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৩০।
(২৬).তাফসীরে আয়াতুল আহকাম, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬।
(২৭).তাফসীরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৯৮।
(২৮).তাফসীরে কাশেফুল আসরার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৯৪-৯৮।
(২৯).তাফসীরে মাওয়ারদী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০২।
(৩০).তাফসীরে সিরাজুম মুনির, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৫৮।
● তাফসিরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেঃ আল্লাহ তা’আলা জাল্লা শানুহু কর্তৃক রুজি রোজগার ও রিজিক বন্টনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হযরত মিকাঈল (আঃ) এর উপর, কার্যসমূহ ও বন্দেগীর দায়িত্ব ভার ১ম আসমানের ফেরেস্তা হযরত ইসরাইল (আঃ) এর উপর, বিপদাপদ ও দুঃখ দুর্দশায় দূরীকরনের দায়িত্বভার হযরত আযরাইল (আঃ) এর উপর অর্পণ করেন।
● শব-ই বারাআত যে মুসলিম উম্মার জন্য একটি বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ রাত্রি এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমস্ত মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।
বড় পীর শেখ সৈয়্যদ আবূ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) তদ্বীয় কিতাব “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” এর ১ম খন্ডে-এ ৬৮৪ পৃষ্টায় উল্লেখ করেনঃ
قال الله عز وجل حم والكتاب المبين انا انزلناه فى ليلة مباركة قال ابن عباس رضى الله عنهما حم قضى الله ما هو كائن الى يوم القيمة والكتاب المبين يعنى القران- انا انزلناه يعنى القران فى ليلة مباركة هى ليلة النصف من شعبان وهى ليلة البرأة وقال ذالك اكثر المفسرين-
অর্থাৎঃ “আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- হা-মী-ম প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শপথ- যে কোরআনকে আমি মুবারক (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর তাফসীর প্রসংগে বলেন- কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার আছে- তা আল্লাহ পাক ফয়সালা করে দিয়েছেন। শপথ উজ্জল প্রকাশ্য গ্রন্থ তথা কোরআনের যাকে আমি বরকতময় রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনীতে নাযিল করেছি- ঐ ১৫ শাবানের রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল বরাআত- এবং অধিকাংশ মোফাসসিরীনে কেরাম এ মত পোষন করেছেন।”
হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের দলীলঃ
দলীল নং ০১
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
অনুবাদঃ হযরত মুয়াজ বিন জাবাল(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তা’আলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।”
০১.সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫।
০২.মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪।
০৩.মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২।
০৪.আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬।
০৫. আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫।
০৬. সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০।
০৭. মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩।
০৮. মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯।
০৯. শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪।
● দলীল নং ০২
عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )
হযরত আলী বিন আবু তালীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্স্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।”
০১.সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮।
০২.শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২।
● দলীল নং ০৩
عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
অনুবাদঃ হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন-এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামকে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেনঃ “কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?]” হযরত আয়শা(রাঃ) বললেনঃ আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ “যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।”
০১.সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯।
০২. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮।
০৩.মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯।
● দলীল নং ০৪
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻻﺷﻌﺎﺭﻯ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻟﻴﻄﻠﻊ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ
ﺧﻠﻘﻪ ﺍﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺍﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ ) ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ )
অর্থ হহযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম)ম হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক (মসাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমানঃ “মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী বষর্ণ করেনএবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।”
১).ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা-১০০, হাদীস নং-১৩৮৯।
(২)মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫।
(৩). ইমাম বায়হাকী,শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩৮২।
(৪).ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদীস নং-২৯।
(৫).মিসবাহুজ জুজাযাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪২, হাদীস নং-৪৮৭।
(৬).আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩য়, হাদীস নং-২৭১৮।
(৭).আহলে হাদীস তথা লা- মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দীন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা” এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩১ আরো ৫ টি হাদীস রয়েছে।
● দলীল নং ০৫
সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ ইবনে মাজাহ শরীফের ১০০ পৃ: এবং মিশকাত শরীফের ১১৫ পৃষ্ঠায় আমীরুল মোমেনীন, শেরে খোদা, মুশকিল কোশা হযরত আলী (রাঃ) হতে মারফু মুত্তাছিল সনদে রেওয়ায়েত করেন- যে, আল্লাহর হাবীব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমানঃ
اذا كانت ليلة النصف من شعبان- فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا- فيقول الا من مستغفرلى فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا كذا حتى يطلع الفجر-
“যখন শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র আগমন করে তখন তোমরা রাত্র জাগরণ করতঃ মহান আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী কর এবং এর পূর্ববর্তী দিনে (১৫ তারিখে) রোজা পালন কর। কেননা চৌদ্দ তারিখের সূর্য অস্থ যাওয়া তথা ১৫ তারিখের রাত্র আরম্ভ হওয়ায় সাথে সাথে মহান আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার আসমানে স্বীয় তাজাল্লী প্রকাশ ফরমান। অর্থাৎ দুনিয়া বাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করতঃ দয়াপূর্ণ কুদরতী আওয়াজে আহ্বান করে থাকেন। আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আজকের এ পবিত্র রাত্রে আমি আল্লাহর দরবারে নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। রুজি-রিজিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাদের চাহিদা অনুপাতে রিজিক দানের ফয়সালা করে দিব। কোন বিপদগ্রস্থ লোক বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের বিপদ দূরীভূত করে দিব। এমন আরো বিষয়ে কেউ প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তা সবই তোমাদেরকে দান করব। মহান আল্লাহ তা’আলার এরূপ করুনাপূর্ণ ঘোষনা সুবহে সাদিক পর্যন্ত চলতে থাকে।”
এছাড়াও হাদীসটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত আছেঃ
১.শুয়াবুল ঈমান” ৩য় খন্ড পৃ. -৩৭৯ হাদীস নং-৩৮২২।
২.মিসবাহুয যুযায” ১ম খন্ড পৃ,-৪৪ হদীস নং-৪৮৬।
৩.মুসনাদে আহমদ” ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা।
এই রাতের আমলঃ
উল্লেখিত হাদীস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদীস পেশ করছি।
হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ওহে আয়শা অথবা বলেছেন, ওও হুমাইরা! তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার হক নষ্ট করবেন?” আমি উত্তরে বললাম, জ্বি না! ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম জিঞ্চেস করলেনঃ “তুমি কি জান এটা কোন রাত?” আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামই ভাল জানেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেনঃ
هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم
“এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।” [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]
●ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেনঃ
هذا مرسل جيد
এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাআত হতে হবে, প্রতি রাকাআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে – এগুলো ঠিক নয়।
হাদীস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।
পরদিন রোযা রাখাঃ
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছেঃ
عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر
হযরত আলী ইবনে আবু তালেব(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “পনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাঞ্চআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪]
●এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। কিন্তু মহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
●বলাবাহুল্য, পনের শা’বানের দিনটি শা’বান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্হের একাধিক কিতাবেই এদিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেনঃ “আরো একটি বিষয় হচ্ছে শব-ই বারাআতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শা’বানের পনের তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, শব-ই বারাআতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’
● তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেনঃ “রমযানের দু’একদিন পূর্বে রোযা রেখো না। যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।”
● একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শা’বানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এর রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণকে সামনে রেখে শা’বানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা আইয়ামে বীয এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শা’বানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইন শা আল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধু ১৫ মাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সূন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শা’বানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শা’বানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখেন তবে ইন শা আল্লাহ সে সওয়াব পাবেন। তবে মনে রাখতে হবে যে, এ মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট নেই!”
এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়! বরং ব্যক্তিগতঃ
এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরয নামাযতো অবশ্যই মসজিদে জামা’আত সহকারে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই। আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। [ইক্তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯]
■ তবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে এবং একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।
শব-ই বারাআতের হালুয়া-রুটিঃ
রাতে হালুয়া-রুটি ও অন্যান্য উন্নত খাবার তৈরী করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কারণ ইহা এক ধরণের উন্নত হালাল খাবার। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি অধিক ভালবাসতেন। (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮১৭ পৃষ্ঠা সহ আরো বিভিন্ন পৃষ্ঠায় ১১টি হাদীস রয়েছে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) থেকে বর্ণিত, মিশকাত শরীফ ৩৬৪পৃষ্ঠা )
●এছাড়া তিরমিযী শরীফে উল্লেখ আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে অন্য দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন নামাজে দন্ডায়মান হও, তবেই তো শান্তিতে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।”
● এতে বুঝা গেল যে, লোকদের খাওয়ানোও বেহেস্ত লাভের একটি উছিলা! পবিত্র শব-ই বারাআতে উপরোক্ত হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ হয়।
প্রথমতঃ মুসলমানগণ নামাজে যাবে একে অপরের সাথে সাক্ষাত হবে এবং একে অপরের সাথে সালাম আদান-প্রদান করবে। আর নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সালাম আদান-প্রদান একটি উত্তম আমল!
দ্বিতীয়তঃ শব-ই বারাআতে ভাল খাবার বন্টনের মাধ্যমে মানুষকে খাবার খাওয়ানো হলো। পাশাপাশি গরিব-মিসকিনরা অন্ততঃ একদিন ভাল খাবার খাওয়ার সুযোগ পেল! তবে এটা সাধ্যানুযায়ী সব সময়ই করা উত্তম।
তৃতীয়তঃ আত্বীয়-স্বজন একে-অপরের বাসা/বাড়িতে খাবার বিতরণের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে।
সুতরাং হালুয়া রুটিসহ উন্নত খাবার পাকানো ও লোকজনকে খাওয়ানো কোন অবস্থায় নাজায়েজ নয়! তবে আবশ্যক মনে করা যাবে না যে, হালুয়া রুটি বানাতেই হবে! না বানালে শব-ই বারাআত পালন হবে না! এমনটি নয়!!
এ রাতে আমাদের করণীয়ঃ
১. ফরজ নামাজ সমূহ জামা’আত সহকারে আদায় করা।
২. কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
৩. প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়া।
৪. বেশী বেশী নফল নামাজ আদায় করা।
৫. সালাতুত তাসবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা।
৬. মৃত মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন এবং আওলিয়ায়ে কেরামসহ নিকটবর্তী কবর জিয়ারত করা।
৭. তাওবা করা, জিকির ও তাসবীহ-তাহলীল পড়া।
৮.বেশি বেশি দু’আ করা! দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবীর জন্য এবং সকল প্রকার কামনা, বাসনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য, ঋণ পরিশোধ করার জন্য, সকল প্রকার বালা,মছিবত, দুঃখ, দুর্দশা, পেরেশানি সহ সকল প্রকার প্রার্থনা নিজের জন্য, পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পারা-প্রতিবেশি এবং জীবিত-মৃত সকল মুমিন মুসলমানের জন্য দু’আ করা!
■ মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সঠিক এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানার, বোঝার এবং মেনে চলার এবং যথাযথ মর্যাদার সাথে প্রতিটি মহিমান্বিত রাত ও দিবস গুলোর আমল করার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা, কবুল এবং হিফাযত করুন
(আ-মীন)।।