মাইজভান্ডারী পীরের পরিচিতি ও আকিদা-বিশ্বাস

 মাইজভান্ডারের প্রথম পীর হলেন গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ আল হাসানী (ক.)। তিনি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারী বাংলা ১২৩৩ সালে ১লা মাঘ, রােজ বুধবার, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন মাইজভান্ডার নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শাহসূফী মাওলানা সৈয়দ মতিউল্লাহ আল-হাসানী (রহ.)। তার মাতার । নাম খাইরুন্নেসা। তিনি নিজ গ্রামের মক্তবে আরবী, বাংলার প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার পর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১২৬০ হিজরী সালে সুদূর কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ১২৬৮ হিজরী সালে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখা-পড়া সমাপ্ত করেন। তার পীর হলেন হযরত শাহসূফী সৈয়দ মােহাম্মদ সালেহ লাহােরী (রহ.)। মাইজভান্ডারী পীর ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ই জানুয়ারী বাংলা ১৩১৩ সালের ১০ই মাঘ, রােজ সােমবার, ৮০ বসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র হযরত মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল হক ফানায়ে ওয়াসেল (রহ.) এর পুত্র হযরত মাওলানা সৈয়দ দেলাওর হােসাইন (ক.) তার স্থলাভিষিক্ত হন।

মাইজভান্ডারী পীরের দাবিঃ

 মাইজভান্ডারী পীর সৈয়দ জিয়াউল হক দাবী করেনঃ

১. রহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলের রহমতের সীমা জুড়ে আমার বেলায়তি কর্মক্ষমতা।

২. আমার দরবার আন্তর্জাতিক প্রশাসন অফিস; যেখান থেকে এই বিশ্ব পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত।

৩. এ বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ আমিই তাে চালাই।

৫. এই বিশ্বের কোথায় কখন কি হয়েছে, হচ্ছে, হবে সব আমার জানা। 

৫. আকাশের উপরে বসে আমি সৃষ্টির কাজকর্ম দেখি; উপরের দিকে আল্লাহর সাথে কথা বলি।

৬. আমার দরবার আন্তর্জাতিক সামরিক আইন প্রসাশক অফিস। দুনিয়ার সবকিছু আমি ভেঙ্গেচুরে ঠিক করি।

৭. মাইজভান্ডার শরীফ হায়াতের ভান্ডার, রিজিকের ভান্ডার, দৌলতের ভান্ডার, ইজ্জতের ভান্ডার। (সূত্র ঃ শাহানশাহ্ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ফিতরাত ও সিফাত, নবম পরিমার্জিত সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১১৫)

মাইজভান্ডারীর আকিদা-বিশ্বাস নং- ১ 

পীর দুনিয়াতে বিপদমুক্ত করতে পারেন। “শাহ ছুফি আলহাজ্ব মাওলানা ছৈয়দ শফিউল বশর আল-হাচানী আল মাইজভান্ডারী কেবলা কাবার জীবনী” নামক পুস্তকের ৩৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, “তিনি (বাবা শফিউল বশর) যে কোন অবস্থাতেই বিপদে ধৈর্যহারা না হয়ে । তাঁর অদ্ভুত প্রত্যুৎপন্নমতিতুের দ্বারা নিজেকে বিপদমুক্ত করতে পারেন।” একই পৃষ্ঠার ১২ লাইন পরে আরাে লিখেছে, “দুঃখে কষ্টে পড়ে মানুষ যখন। তার সান্নিধ্যে ছুটে আসতেন, তখন তিনি অতি নম্রতার মাধ্যমে ধৈর্য্যের সাথে তাদের কথা শ্রবণ করতেন এবং দুঃখ কষ্টের কারণ উদ্ভাবনে ব্রতী হয়ে দয়াল বাবা ভান্ডারীর (ক.) উছিলা তলবের মধ্য দিয়ে আগত ভক্তবৃন্দকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দানের জন্য নিরলস প্রচেষ্টায় রত থাকতেন।”

 তার বিপক্ষে দলিলঃ

 কোন পীর বা ওলী যত বড়ই হােক না কেন তারা কোন বিপদ-আপদ দূর করার বা কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক নন। কেননা তারা সবাই মানব জাতির অন্তর্গত। আল্লাহ তাআলা তার সবচেয়ে প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলেন, .

قل لا أملك لنفسی نفعا ولا ضرا الأماشاء الله

অর্থঃ হে নবী আপনি বলুন, আমি আমার নিজের উপকার ও ক্ষতির মালিক না, আল্লাহ যা চান তা ছাড়া। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৪৯)। কারাে কোন বিপদাপদ আসলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ তা দূর করতে পারে ; একথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ঘােষণা করেন

الله بضر فلا كاشف له إلا هو. وان يمشک بخير فهو وان يمس على كل شئ قدير

অর্থঃ আল্লাহ যদি তােমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করান, তাহলে তিনি ব্যতিত উহা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তােমার কল্যাণ করেন তবে তিনিই তাে সর্ববিষয় শক্তিমান। (সূরা আন’আম, আয়াত: ১৭)। সুতরাং কুরআনের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট হলাে, নিজের বিপদ-আপদ দূর করার ক্ষমতা স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এরও ছিল না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে প্রতি এমন বিশ্বাস রাখা গােমরাহী ও শিরক। যা ঈমান বিধ্বংসকারী আকিদা।। মাইজভান্ডারীর আকীদা-বিশ্বাস নং- ২ পীর ইহ-পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন। তাদের গ্রন্থ রত্নভান্ডার এর ১ম খন্ড ১৭ নং পৃষ্টায় লিখেছে

 হীন দাস হাদী কয় হাশরেতে নাহি ভয়,

 পিছে পিছে দাসগণ ফিরাইবেন গাউছ ধন।

 

 ‘শাহানশাহ্ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী’ বইয়ের ৫৫ নং পৃষ্টায় লিখেছে “আমার মুরীদ ও প্রকৃত মাইজভান্ডারী আশেক ভক্তদের কোন ভয় নাই। ইহ-পরকালের সকল বিপদ সংকটে দোধারী তাওহীদি তলােয়ার নিয়ে আমি তাদের সামনে আছি। যে তরবারী যেতে আসতে উভয় ধারে কেটে তৈরি করবে তাদের মুক্তি মঙ্গল পথ।

 তার বিপক্ষে দলিলঃ

 ভান্ডারীর এই মতবাদ সম্পূর্ণ কুরআন বিরােধী। যা কুফুরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা, আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামাতের আকীদা হচ্ছে, হাশরে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের সমস্ত কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। যারা দুনিয়াতে আল্লাহ ও

তাদের ভীষণ আযাব হবে। তাদের কষ্টের সীমা থাকবে না। শুরু হবে বিচার; স্বয়ং আল্লাহ হবেন বিচারক। সেদিন কারাে ক্ষমতা থাকবে না যে, আল্লাহর বিচার থেকে তাকে রক্ষা করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআ

ان يشتروا إلى ربهم ليس لهم من دونه ولئ ولا شفيع

অর্থঃ তাদেরকে স্বীয় প্রতিপালকের সমীপে সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ব্যতিত তাদের কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে না।

| (সূরা আনআম: ৫১),

مالهم من الله من عاصم

অর্থঃ আল্লাহ হতে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ নাই। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭) আল্লাহপাক আরাে বলেন,

অর্থঃ (কাল হাশরে) কেউ অপরের পাপের বােঝা বহন করবে না। (সূরা ফাত্রি, আয়াত: ১৮)

ولاتزژوازره و آخری لكل امرئ منهم يوم شأن يغنيه

অর্থঃ সে দিন (হাশরে) প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। (সূরা আবাসা, আয়াত: ৩৭)। দুনিয়াতে যেসব আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে মানুষ একে অপরের জন্য জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে কুষ্ঠিত হয় না, হাশরে তারাই নিজ নিজ চিন্তায় এমন নিমগ্ন হবে যে, কেউ কারও খবর নিতে পারবে না। বরং সামনে দেখলেও মুখ লুকাবে। (সংক্ষিপ্ত বাংলা মারেফুল কোরআন- পৃ: ১৪৩৮)

সুতরাং উল্লিখিত কুরআনের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হল, হাশরে কোন পীরের ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহর হাত থেকে মুরীদকে রক্ষা করবে, বরং পীর নিজের চিন্তায় হাবুডুবু খাবে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে। অতএব, সাব্যস্থ হল যে, উপরে বর্ণিত ভান্ডারীর অলিক ধারণা কুরআন বিরােধী ও কুফুরী। যারা কুফরী করে তারা পথভ্রষ্ট লােক।

 মাইজভান্ডারীর আকিদা-বিশ্বাস নং- ৩

 পীরের দরবারে গেলে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় না এবং পীর কর্তৃক মনের বাসনা পূরণ হয়। মাইজভান্ডারীর বই ‘শফি বাবার জীবনীর (৪র্থ প্রকাশ) ৪১নং পৃষ্ঠায় লিখেছে“তার (শফি বাবার) দরবারে এসে কেউ খালি হাতে ফিরে যেতনা। কেউ কেউ শফি বাবার সাক্ষাতে ও আলােচনায় ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্যমান মনে করে তাঁর গুণ গ্রাহিতা ও মহত্তের আলােচনা করতেন। এ প্রসঙ্গে তাদের নিম্নোক্ত কবিতাটি আরাে স্পষ্ট “ভান্ডারীকে যে পাইল-খােদা রাসূল সে চিনিল। গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী পূর্ণ করেন বাসনা।” (রত্ন ভান্ডার, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৩৩)। 

তার বিপক্ষে দলিল

 মাইজভান্ডারী পীর সম্পর্কে তাদের এই বিশ্বাস ভ্রান্ত ও ঈমান হরণকারী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে সম্পর্কে এরকম বিশ্বাস রাখা বড় শিরক। কেননা কামনা-বাসনা পূর্ণ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারাে ভাল-মন্দ পৌছানাের ক্ষমতা নাই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন

قل لن يصيبنا إلا ما كتب الله لنا

অর্থঃ হে নবী আপনি বলে দিন, কখনাে আমাদের পৌছবে না, আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যা লিখে রেখেছেন তা ব্যতিত। (সূরা তওবা, আয়াত: ৫১) একমাত্র আল্লাহ তাআলাই খালি হাত পূর্ণ করার বা বাসনা পূর্ণ করার মালিক। সব কিছুর কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতে। একথা উল্লেখ করে আল্লাহপাক বলেন

فسبحان الذي بيده ملكوت كل شي

অর্থঃ অতএব, পবিত্র তিনি, যার হাতে সবকিছুর কর্তৃত্ব। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৮৩) আল্লাহ তাআলাই যে কামনা-বাসনা পূর্ণকারী এবং তিনিই যে সর্বময় ক্ষমতার

অধিকারী আর কোন নবী, কোন পীর, কোন বাবা, কোন খাজা কোন মানুষের কামনা-বাসনা পূর্ণ করার এবং লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না একথা উল্লেখ করে রাসূল (সাঃ) বলেন, এ

واعلم أن الأمة لو اجتمت على ا ينفعوك إلا بشئ قد كتبه لك ولواجتمعوا على أن يضروك بشئ لم يضروگ الآ بئى قد كتبه الله

অর্থঃ জেনে রেখ! তােমার উপকারের জন্য সমস্ত জাতি যদি একত্রিত হয়, তবে আল্লাহ তােমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া তারা তােমাকে কোন উপকার করতে পারবে না। আর তােমাকে কোন ক্ষতি করার জন্য যদি সমস্ত মানুষও একত্রিত হয়, তবে আল্লাহ যা তােমার উপর লিখে রেখেছেন তা ছাড়া তারা তােমাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মেশকাত, ৪৫৩ পৃষ্ঠা, তিরমিযী ২য় খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)

 মাইজভান্ডারীর আকিদা-বিশ্বাস নং- ৪

 বাবা ভান্ডারী সন্তান দিতে পারেন। ভান্ডারী ভক্তদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাবা ভান্ডারী সন্তান দিতে পারেন। এমনই এক ভক্তের ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হল। ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারী ৪ তারিখে আমার বিয়ে হয়। সুদীর্ঘ ১৪ বৎসর আমাদের কোন সন্তান হয় নাই। বাবাজানের কাছে অনেকবার সামনা-সামনি আর্জি করেছি। সবসময় বলতেন, হবে, দেব’। (ঘটনার শেষাংশে লিখে) ১৪ বৎসর ৭মাস পর ১৯৮৮ইং সেপ্টেম্বর মাসে, বাবাজানের অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের প্রথম মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাবাজানের ওফাতের সপ্তাহ পূর্বে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি যে মেয়েটি দিয়েছেন তার একটা নাম দিলে ভাল হয়। বাবাজান কালাম করলেন, ‘নীহার রাখেন, নীহার’ মেয়ের নাম রাখলাম নীহার আখতার। তাঁর মেহেরবানীতে আমাদের ২ মেয়ে ১ ছেলে হয়েছে। বর্ণক: কামাল উদ্দিন | আহম্মদ, চট্টগ্রাম। (তথ্যসুত্রঃ শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক) (নবম পরিমার্জিত সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২২৬-২৭)

 তার বিপক্ষে দলিলঃ

 ভান্ডারীর এই বিশ্বাস ঈমান বিধ্বংসী শিরিকী। এরকম বিশ্বাসকারী ব্যক্তিকে মুসলমান বলা যায় না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,

يخلق ما يشاء يهب لمن يشاء اناثا ويهب لمن يشاء الذكور او يزوجهم ذكرانا وانائا ويجعل من يشاء عقيما

অর্থঃ তিনি (আল্লাহ) যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র-সন্তান দান করেন; অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। (সূরা শূরা; আয়াত: ৪৯-৫০)। সুতরাং উল্লিখিত কুরআনের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্তান দেওয়ার “লক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। গাইরুল্লাহ তথা পীর বা মাজারের কাছে। স্তান চাওয়া এবং পীর সন্তান দিতে পারে এমন আকিদা পােষণ করা শিরিকের নামান্তর। আর আল্লাহর সাথে যারা শিরিক করে, তারা মুশরীক। মুশরীকের জন্য জান্নাত হারাম।

 মাইজভান্ডারীর আকিদা-বিশ্বাস নং- ৫

দ্যি, নৃত্যর দ্বারা খােদাপ্রেমে হৃদয় উজ্জীবিত হয়। এ প্রসঙ্গে তারা লিখেছে “মাইজভান্ডারী গানের কথা ও সুরে বাদ্যের তালে তালে অন্য সবকিছু ভুলে খােদাপ্রেমে হৃদয় মন উজ্জীবিত হয়। সামা’ বা এই সংগীতময় জিকির স্মরণ অনুষ্ঠানে ভক্তদেরকে ‘হালকা বা হেলে দুলে নৃত্য করতে দেখা যায়। ফলে শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জাগ্রত হয়ে জিকিরে রত হয়।

(শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.), পৃষ্ঠা ৪৩)

তার বিপক্ষে দলিলঃ

 তাদের এই মতবাদ মারাত্মক ঈমান হরণকারী। যা সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী। এখানে ভান্ডারী বলে, তার গানের কথা ও সুরে বাদ্যের তালে তালে অন্য সব কিছু ভুলে খােদাপ্রেমিক হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা বলেন, গান-বাদ্যের দ্বারা শয়তান প্রেমিক হয়। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে।

واستفز من استطعت منه بصوتك

অর্থঃ আল্লাহপাক শয়তানকে লক্ষ্য করে বলেন, তুই তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস, সত্যচ্যুত (পথভ্রষ্ট) কর স্বীয় আওয়াজ (গান-বাদ্য) দ্বারা। (সূরা বনী ইস্রাঈল আয়াত: ৬৪) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, গান-বাদ্যযন্ত্র ও রং তামাশার আওয়াজই শয়তানের আওয়াজ। হাফেজ ইবনে কাইয়ুম (রহ.) বলেন, গুনাহর দিকে আহবানকারী সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে গান-বাদ্য। তাই শয়তানের আওয়াজের ব্যাখ্যা গান-বাদ্য দ্বারা করা হয়েছে। (এগাছাতুল লহফান, খন্ড ১ পৃষ্ঠা ২৫৫, আহছানুল ফতওয়া ৮/৩৮১) ভান্ডারীর দাবি গান-বাদ্যে অন্তর খােদাপ্রেমে উজ্জীবিত হয়। পক্ষান্তরে রাসূল (সাঃ) বলেন, অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টি হয়। এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে

عن جابر قال قال رسول الله علم الغناء ينبت النفاق في القلب گما ينبت الماء الزرع

 

অর্থঃ হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, গান-বাজনা মানুষের অন্তরে এইভাবে মুনাফেকী বা কপটতা জন্ম দেয়, যেমনভাবে পানি শস্য উৎপাদন করে। (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪১১) 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরাে বলেন,

روی ابوامامة عنه عدم انه قال ما رفع احد صوته لغناء الأبعث الله شيطانين على منكبيه يضربان باعقابهما على صدره حتی یمسک

” অর্থঃ কোন ব্যক্তি গান শুরু করার সাথে সাথে আল্লাহপাক তার জন্য দুটি

শয়তান নিযুক্ত করে দেন। যারা তার কাঁধে বসে বক্ষে পা দ্বারা আঘাত করতে থাকে যতক্ষণ না সে গান বন্ধ করে। (ইহয়াউল উলুম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫১) 

নবী করীম (সাঃ) আরাে বলেন,

انه الله قال ان الي اول متاح أول من تغني

অর্থঃ সর্বপ্রথম বিলাপকারী ও সর্বপ্রথম গায়ক হচ্ছে অভিশপ্ত শয়তান।

| (ইহয়াউল উলূম, খন্ড ২ পৃষ্ঠা ২৫১) সুতরাং গান-বাদ্য যে কত জঘণ্য, তা উল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা সহজেই বুঝে আসে। গান-বাদ্য হারাম জেনেও করা ফাসেকী, আর হালাল মনে করা কুফুরী। তাতে ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা আছে। মাসআলাঃ সকল প্রকার বাদ্য-বাজনা বিশিষ্ট মারফতী গান, মুর্শিদী গান, বাউল গান, ছেমা, উপদেশ মূলক গান, আল্লাহ ও রাসূলের নাম নিয়ে গান গাওয়া, শ্রবণ করা, শিক্ষা দেওয়া এবং এগুলােকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা সবই কবীরা গুনাহ ও হারাম। (প্রমাণঃ তাফসীরে মাযাহিরী ৭ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৪৭-৪৮, রুহুল মাআনী ২১/৬৯, ফাতহুল কাদীর ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৫০, আলমগিরি ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৫১, রদুল মুখতার, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩০)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Main Menu