এনায়েতপুরের পীরের নাম মাওলানা শাহ্ সূফী মােহাম্মদ ইউনুছ আলী। তার পিতার নাম মাওলানানা শাহ সূফী আঃ করীম। তিনি বাংলা ১২৯৩ সালের ২১ শে কার্তিক, সিরাজগঞ্জ জেলা অন্তর্গত চৌহালী থানাস্থ এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। গ্রামের নিসবতে তাকে এনায়েতপুরী পীর বলা হয়। তিনি সৈয়দ উয়াজেদ আলী (কলকাতা) এর নিকট বাইআত গ্রহণ করেন এবং তার থেকে খিলাফত লাভ করেন। তিনি ১৮ই ফাল্গুন ১৩৫৮ সালে ইন্তেকাল করেন।
এনায়েতপুরীর আকিদা-বিশ্বাস নং- ১
আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ হলেন “আহাদ” আর রাসূল হলে “আহমদ” এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটা “মীম” হরফের তার প্রমাণ তাদের রচিত পুস্পহার বইয়ের ১২তম সংস্করণ ৩৬নং পৃষ্ঠার নিম্নোক্ত কবিতাঃ
বানাইয়া নূর নবী দেখাইলেন আপনা ছবি
সেই নবীজীর চরণ বিনে নাইগাে পরিত্রাণ ।
আহাদে আহম্মদ বানাইয়ে, মিমকা পদ মাঝে দিয়ে
খেলতিয়াছেন পাক বারি হইয়া বে-নিশান।
তার বিপক্ষে দলিলঃ এনায়েতপুরীর এই আকিদা ঈমান বিধ্বংসী কুফরী। রাসূল সম্বন্ধে আহলে-হকের ।
তা) রাসূল মাখলুক ও আল্লাহর বান্দা। আল্লাহর জাত বা সত্তা কারও জাত বা সত্তার মধ্যে মিশ্রিত বা দ্রবীভূত হন না এবং তাঁর জাত বা সত্তার মধ্যেও কেউ মিশ্রিত বা দ্রবীভূত হয় না। অতএব, খালিক (আল্লাহর) সাথে মাখলুক রাসূল এর অভিন্নতা প্রকাশ করা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। যা সম্পূর্ণ কুরআন পরিপন্থী। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে
وما محمد الا رسول
অর্থঃ মুহাম্মদ (সাঃ) একজন রাসূল বৈ কিছুই নয়। (সূরা আল-ইমরান, আয়াতঃ ১৪৪)।
محمد رسول الله
অর্থঃ মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তাআলার রাসূল। (সূরা ফাতহ, আয়াত: ২৯)। উল্লিখিত কুরআনের বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) কে আল্লাহর রাসূল বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে যাকে রাসূল বলা হয়েছে তিনি কখনও আল্লাহ হতে পারেন না। সুতরাং আল্লাহ এবং রাসূলের মধ্যে পার্থক্য এবং বৈপরিত্য রয়েছে।
এনায়েতপুরীর আকিদা-বিশ্বাস নং-২
পীর মনের আশা পূর্ণ করেন। ‘পুষ্পদ্যান’ বইয়ের ৭৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে,
খাজা তােমার দরবারে কেউ ফিরে না খালি হাতে, খাজা তােমার পাক রওজায় এসে যদি কেউ কিছু চায়,
| চাইতে জানলে রয়না কাঙ্গাল অফুরন্ত ভান্ডারে।
তার বিপক্ষে দলিলঃ
তাদের এই মতবাদ সম্পূর্ণ শিরিকী মতবাদ। কেননা, আল্লাহ ছাড়া কোন পীর-মাশায়েখ, বুযুর্গ-ওলী মনের আশা পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে না। এ মর্মে আল্লাহপাক ঘােষণা করেন,
فل كن يصيبنا الا ما كتب الله لنا
অর্থঃ হে নবী আপনি বলে দিন, কখনাে আমাদের পৌঁছবে না আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া, (সূরা তওবা আয়াতঃ৫১)
قل كل من عند الله فمال هؤلاء القوم لا يكادون يفقهون حديثا
অর্থঃ হে নবী আপনি বলে দিন, সবকিছুই আল্লাহর তরফ থেকে। এই সম্প্রদায়ের কী হল যে, এরা একেবারেই কোন কথা বুঝে না। (সূরা নিসা, আয়াতঃ ৭৮)।
সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কাউকে মনের আশা পূর্ণকারী বিশ্বাস করলে তা হবে শিরক।
এনায়েতপুরীর আকিদা-বিশ্বাস নং-৩
পীর ধরা ফরজ তরিকতের ওজিফা শিক্ষা ২৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে “পীর ধরা সবার জন্য ফরজ।”
তার বিপক্ষে দলিলঃ এনায়েতপুরীর পীরের এ মতবাদ সম্পূর্ণ বাতিল ও ভিত্তিহীন। কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে
লল বা প্রমাণ নেই। কেননা, ফরজ বলা হয় যে সকল কাজ কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলিল দ্বারা অবশ্য পালনীয় ও অলঙ্গনীয় বলে প্রমাণিত। আর পীর ধরা কুরআন-সুন্নাহর মধ্যে অবশ্য পালনীয় ও অলঙ্গনীয় বলে প্রমাণিত নয়। কোন কিছুকে ফরজ সাব্যস্ত করতে হলে কে অর্থাৎ কুরআনের স্পষ্ট বর্ণনা থাকা জরুরী। যা এখানে মওজুদ নেই। সুতরাং শরীয়তের কোন দলিল ছাড়া পীর ধরাকে ফরজ বলা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছু নয়। এগুলি শরিয়ত বিকৃত করার মত জঘণ্য অপরাধ। মুক্তিপ্রাপ্তি ও বেহেশত লাভের জন্য শর্ত হচ্ছে শরীয়তের অনুসরণ। যে ব্যক্তি শরীয়তকে মান্য করবে এবং তদানুযায়ী আমল করবে, সে মুক্তি পাবে ও বেহেশতে প্রবেশ করবে। যদি কারও নিকট সে মুরীদ না হয়। তার প্রমাণ,
والذين امنوا وعملوا الصلحت او لائک أصحاب الجنة هم فيها خالدون.
অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে এবং সকাজ করেছে তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারা, আয়াত: ৮২) আর যদি কেউ কারাে নিকট মুরীদ হয়, কিন্তু শরীয়তের পাবন্দী না করে, তবে তার বেহেশতে প্রবেশ হওয়া সম্ভব নয়। একথার অগণিত প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে। যার কোন পীর নেই, তার পীর শয়তান” পীর সাহেবের এ মতবাদও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন। কুরআন ও হাদীসে এর কোন দলিল বা প্রমাণ নেই। আহলে হক উলামা-মাশায়েখগণ বাইআত বা মুরীদ হওয়াকে সুন্নাত প্রমাণ। করেছেন। তবে ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি ফরজ। তা ভিন্ন কথা।