বসুমতী পীর বলতে বসুমতী আবাসিক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সৈয়দ মােঃ নাসির উদ্দিন কে বােঝানাে হয়েছে। তার পূর্ণ ঠিকানা: দরবারে আশেকীন, সােলমাইদ দরবার শরীফ। বসুমতী আবাসিক প্রকল্প, ব্লক আই, বাড্ডা, ঢাকা- ১২১২।
বসুমতী পীরের খেতাবঃ
নূরে নুরানী, চেরাগে রুহানী, কুতুবে রব্বানী, শরীয়ত, মারফত, দকিকত, হাকিকত ও তাসাওয়াফের জ্ঞানে ওলিয়ে কামেল, কামেলে মােকাম্মেল। কোরআনে মুফাচ্ছেরীন, রহমতে রাহীম, তরিকতে শাহেনশাহ্, শরীয়তে মাওলানা, পীরে কামেল, গােপন দরবেশ না প্রকাশিত দরবেশ, নায়েবে রসুল, হেদায়েতকারী আউলিয়া। (দৈনিক আমাদের সময়, ৮ই মে ২০১১ইং)
এসব খেতাবের একটিরও তার কাছে কণা পরিমাণ যােগ্যতা নেই। বিশ্বের বড়। বড় আউলিয়া ও সাহাবাগণ এমনকি নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত নিজেদের নামের সঙ্গে নিজেরা কোন খেতাব ব্যবহার করেন নি।
বসুমতীর কুফুরী আকীদা-বিশ্বাস
১. আল্লাহ অসহায় ও বসুমতীর মুখাপেক্ষী।
২. বসুমতী আল্লাহর ইজ্জত-সম্মান রক্ষাকারী।
৩. তার কালবের মােবাইলে আল্লাহ টেলিফোন করেন।
৪. আল্লাহ তাকে টিভির চ্যানেল খুলে দেখার আদেশ করেন।
৫. স্বয়ং আল্লাহ তাকে কুরআন ও রাজনৈতিক শিক্ষা দেন।
৬. সব সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল তাকে দিয়েছে।
৭. ব্রিাইল তার মুরীদ ও অনুগত। (সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়, ৮ই মে ২০১১ইং)।
বসুমতী পীরের আকীদা-বিশ্বাস নং-১
ভাল-মন্দ সব সিদ্ধান্ত পীরের হাতে। বসুমতী পীর দৈনিক আমাদের সময়, ৮ই মে ২০১১ ইংরেজী তারিখের এ পত্রিকার ১৮তম পর্বে লিখেছে,
প্রশ্নঃ হুজুর বাংলাদেশে যানজট, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের মারাত্মক সমস্যা। এ বিষয়ে আপনি কোন সিদ্ধান্ত দিবেন কি?
উত্তরঃ সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল আমাকে দিয়েছেন। যানজট গজবে বাংলাদেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যা আমি টিভিতে দেখেছি। আমার মুরীদরা ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত আমি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারি না। মুরিদ ছাড়া আমি সুপারিশ করলে আল্লাহ আমার মন্ত্ৰীন্ত বাতিল করে দিবে…………..।
তার বিপক্ষে দলিলঃ
বসুমতীর এই আকীদা সম্পূর্ণ কুরআন-হাদীস পরিপন্থী। এমন আকীদা পােষণকারীকে মুসলমানই বলা যায় না, পীর হওয়া দূরের কথা। পীর সাহেব দাবী করলেন, সব (ভালমন্দ) সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল তাকে দিয়েছে। অথচ আল্লাহ তাআলা তার সবচেয়ে প্রিয় রাসূল (সাঃ) কে বলেন,
قل لا املك لنفتی نفعا ولا ضرا الا ما شاء الله
অর্থঃ হে নবী আপনি বলুন, আমি আমার লাভ ও ক্ষতির মালিক না, আল্লাহ যা চান তা ছাড়া। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৪৯) ,
وان يمسسك الله بضر فلا كاشف له الا هو وان يمسسك بخير فهو
” على كل شئ قدير.
অর্থঃ আল্লাহ যদি তােমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করান, তাহলে তিনি ব্যতিত উহা দূর করার কেউ নেই। আর যদি তিনি তােমার কল্যাণ করলে তবে তিনিই তাে সর্ববিষয়ে শক্তিমান। (সূরা আনআম, আয়াত: ১৭)।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে:
والخيال لیدی
অর্থঃ ভাল-মন্দ সবই তােমার (আল্লাহর) হাতে। সুতরাং কুরআন হাদীসের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট হলাে ভাল-মন্দ সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরও ছিল না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে প্রতি এমন বিশ্বাস রাখা গােমরাহী ও শিরক।
বসুমতীর আকীদা বিশ্বাস নং-২
কালিমা পরিবর্তনঃ বসুমতী পীর নাসির উদ্দিন লিখেছে “হুজুর (বসুমতী পীর) বলেন, আমি জিব্রাইকে বললাম, আল্লাহ আমাকে যখন রাসূল (সাঃ) এর প্রতিনিধি ও হেদায়েতকারী আউলিয়া হিসাবে নিয়ােগ দিয়েছিলাে তখন আল্লাহ তােমাকেসহ সকল বিশ্ব সৃষ্টিকে নির্দেশ দিয়েছিল এই বলে যে, তােমরা বল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মান তাজিদা লাহু আউলিয়া মুর্শেদা। আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে সকল সৃষ্টি এই স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। শুধু বাকী ছিল জ্বিন এবং ইনছান। তারপর আমি জিব্রাইলকে বললাম, তুমি কি আমাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছিলে? জিব্রাইল বলল, জ্বি হুজুর, আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে অবশ্যই আমি আপনাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।
তার বিপক্ষে দলিলঃ
কালিমা সম্বন্ধে আহলে হকের আকীদা হল, কালিমা তায়্যিবা তাওহীদের মূলভিত্তি এবং এতে রিসালাতের স্বীকৃতি ও ঘােষণা দেওয়া হয়। এই কালিমাটি বিশ্লেষণ করলে তুিনটি অংশ পাওয়া যায়। প্রথম অংশ لا اله । দ্বিতীয় الا الله অংশ। তৃতীয় অংশ محمد رسول الله অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। কালিমার এই তিনটি অংশের একটি অংশকেও অস্বীকারকারীকে মু’মিন বলা যায় না। কেননা, আল্লাহকে বিশ্বাস করা যেমন জরুরী, আল্লাহর রাসূলকে বিশ্বাস করাও তেমন জরুরী। তৃতীয় অংশ অর্থাৎ রাসূলকে বিশ্বাস না করলে আল্লাহকেও বিশ্বাস করা হয় না। কারণ, রাসূলের কাছেই আল্লাহর বাণী এসেছে। বসুমতী পীর কালিমার তৃতীয় অংশ অর্থাৎ محمد رسول الله এর স্থানে ‘মান তাজিদা লাহু আউলিয়া মাের্শেদা’ আনার অর্থ হল কালিমার তৃতীয় অংশ অবিশ্বাস করা। অতএব, প্রমাণ হল, সে কালিমার তৃতীয় অংশ অবিশ্বাসকারী। আর যে তা। অবিশ্বাস করে সে মুসলমানই নয়, পীর হওয়া তাে দূরের কথা।
বসুমতী পীরের আকীদা-বিশ্বাস নং- ৩
আল্লাহ রাজনীতির কারণে অসহায়। বসুমতী পীর লিখেছে, তাকে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এটা সত্য, তবে আমি যে আমার রাজনীতির কারণে অসহায়। যে কারণে আমি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। আমি প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করতে পারছি না। আমি নিরুপায় তুমিই ব্যবস্থা গ্রহণ কর। (সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়, ৮ই মে ২০১১ইং)
তার বিপক্ষে দলিলঃ
বসুমতীর এ আকীদা সম্পূর্ণ কুরআন পরিপন্থী কুফরী আকিদা। কেননা, কুরআনে বলা হয়েছে,
پایها الناس انتم الفقراء إلى الله والله هو الغنى الحميد”
অর্থঃ হে মানবগণ! তােমরা আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী এবং আল্লাহ হলেন। বেনিয়াজ, সর্বগুণে গুণান্বিত। (সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ১৫)
الله الصمد অর্থঃ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী (সূরা ইখলাস, আয়াত: ২)
تبرک الذي بيده الملك وهو على كل شئ قدير .
অর্থঃ বরকতময় তিনি, যার হাতে সর্বময় কর্তৃতু। আর তিনি সব কিছুর উপর। সর্বশক্তিমান। (সূরা মূলক, আয়াত: ১) সুতরাং কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হল যে, বসুমতীর এই আকীদা ঈমান বিধ্বংসী। এমন আকীদা পােষণকারীকে মুসলমান বলা যায় না, পীর হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
বসুমতী পীরের আকীদা-বিশ্বাস নং- ৪
বসুমতী পীর আল্লাহর সম্মান রক্ষাকারী। বসুমতী পীর লিখেছে, আল্লাহ নাকি তাকে বলেন, “অতি সত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ কর, না হলে লেবাননের এই মহিলার বক্তব্যে আমার ইজ্জত সম্মান কিছুই থাকছে না। আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি। উত্তরে আমি আল্লাহকে বললাম, তুমি ধৈৰ্য্য ধর এবং শান্ত হও। আমি অতি সতুর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” (সূত্র, আমাদের সময়, ৮ই মে ২০১১ইং)
তার বিপক্ষে দলিলঃ।
আল্লাহ সম্বন্ধে এমন গাঁজাখুরী কথা শয়তানও বলতে সাহস পায় না। কিন্তু বসুমতী ইবলিস তা বলতে একটু সংকোচও করে নাই। মূলত: সে এ যুগের দাজ্জাল বৈ কিছু নয়। আল্লাহ সম্বন্ধে সহীহ আকীদা হল, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল, সম্মান, অসম্মান সব তার হাতে। বান্দা ইবাদত করলে আল্লাহর এ সম্মান বাড়ে না, নাফরমানী করলেও তার সম্মান কিঞ্চিৎ কমে না। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। এ সম্বন্ধে কুরআনে বলা , হয়েছে , وتعز من تشاء وتذل من تشاء بيدك الخير انك على كل شئ قدير
অর্থঃ (আল্লাহ) যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করেন। তােমারই (আল্লাহর) হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ২৬) অন্যত্র বলা হয়েছে,
ان الفضل بيد الله يؤتيه من يشاء والله واس عليه
অথঃ আপনি বলুন, অবশ্যই মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহর হাতে, তিনি তা যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৭৩)। সুতরাং বসুমতী আউলিয়া কুরআনের এসব আয়াতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বেঈমান বলে সাব্যস্ত হল। এতে সন্দেহের অবকাশ নাই।